[caption id="attachment_12103" align="alignnone" width="600"]
মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরের চারপাশের রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য হকার ও যানবাহন। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট । সত্যের পথে[/caption]
যন্ত্রণা আর ভোগান্তির আরেক নাম রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর। এ চত্বরের চক্করে অতিষ্ঠ মিরপুরবাসী। একবার সিগন্যালে থামলে যে কাউকে অন্তত ১৫ মিনিট আটকে থাকতে হয়। আর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে হলে তো কোনো কথাই নেই। তখন আধা ঘণ্টা থেকে আরও বেশি সময় গড়ায়। এ পথে যাতায়াতকারীদের প্রতিদিন এই ভোগান্তি সয়ে পথ চলতে হয়। দিনের পর দিন চলছে এই অবস্থা।
পুরান ঢাকার পর রাজধানীর সবচেয়ে জনবহুল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত মিরপুর। সেই মিরপুরের কেন্দ্রবিন্দু ১০ নম্বর গোলচত্বর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে কেবলই গিজগিজ করে মানুষ আর মানুষ। সেই সঙ্গে নানা ধরনের যানবাহনে থাকে ঠাসা। এ যেন আরেক গুলিস্তান। গোলচত্বরকে কেন্দ্র করে আশপাশের ফুটপাত পুরোটাই দখল করে নিয়েছে হকাররা। ফুটপাত নামক কোনো জিনিস সেখানে অবশিষ্ট নেই। অনেকে রাস্তার ওপর শুরু করেছে নানা ধরনের ব্যবসা। বাধ্য হয়ে পথচারীদের রাস্তায় নেমে আসতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, এ সময় মিরপুর-১১ থেকে কাজীপাড়া ও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে কচুক্ষেতমুখী যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি। তার ওপর বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণে মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ওই দিন অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ। ১১ নম্বর থেকেই শুরু হয়ে যায় ১০ নম্বর অভিমুখী যানবাহনের লম্বা জট। এই সিগন্যাল পার হতেই লেগে যায় আধা ঘণ্টার বেশি। এ পথে যাতায়াতকারী মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা উজ্জ্বল বিশ্বাস তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাঁর অফিস পল্টনে। অন্য সময় মেট্রোতে যাতায়াত করেন। কিন্তু আগারগাঁওয়ের পর মেট্রো বন্ধ থাকায় বাসেই উঠে বসেন। আধা ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। কিন্তু ১০ নম্বর ক্রসিং পার হতে পারেননি।
তাঁর মতো আরও অনেকেরই এ রকম ক্ষোভ উগড়ে বের হয়। সিগন্যালে যখন শিকড় পরিবহন নামের বাসটি দাঁড়িয়ে ছিল, দুই-চারজনের মুখ থেকে অশালীন ভাষার আওয়াজ আসে।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামসংলগ্ন মিল্ক ভিটা রোড দিয়ে বের হয়ে মিরপুর রোড হয়ে মিরপুর ১ নম্বরে যেসব যানবাহন চলাচল করত, কিছুদিন ধরে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের ক্রসিংটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ১০ নম্বর গোলচত্বরসংলগ্ন ইউটার্ন দিয়ে ঘুরে ১ নম্বরের দিকে যেতে হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, এ কারণে মিল্ক ভিটা রোডে স্টেডিয়ামের আগে থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে যানজট।
স্টেডিয়ামসংলগ্ন আকিজ ফার্নিচারের দোকানি সোহাগ মিয়া বলেন, এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই অবস্থা। এ থেকে কারও নিস্তার নেই। আর স্টেডিয়ামে খেলাধুলা থাকলে তো এ সড়ক দিয়ে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টা
এ সময় দেখা যায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। গোলচত্বর সিগন্যাল থেকে চারটি সড়কেই কম করে এক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। রোকেয়া সরণির কাজীপাড়া, মিরপুর রোডের মিরপুর মডেল থানা, অরিজিনাল ১০ নম্বর এবং বিআরটিএ অফিস থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বরমুখী প্রতিটি সড়কই যানজটে ঠাসা। আর ওই সময় ফুটপাত ও সড়কে হকারের সংখ্যাও আরও বাড়ে। এমনকি দেখা যায়, চৌরাস্তার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের মোড়ে ফুটপাত ঘেঁষে রাস্তার ভেতরেই একজন বিক্রি করছেন লেবুর শরবত। রীতিমতো ভ্যানগাড়ির ওপর পানির জার ও মেশিনপত্র নিয়ে ব্যবসা করছেন।
বিক্রেতা ইমাউল ইসলাম বলেন, অন্য জায়গায় বসলে শরবত বেশি বিক্রি হয় না। ওখান দিয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার বেশি হয়। মানুষের ভিড় বেশি থাকে। এ জন্য শরবত বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু এতে যে যানজট বেড়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি নির্বিকার হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
ফুটপাতের পোশাক বিক্রেতা আনিস আহমেদ জানান, অনেক দিন ধরেই তো ব্যবসা করছেন। কিন্তু মানুষের যাতে চলাচলে সমস্যা না হয়, সে জন্য ফুটপাতের একপাশে বসেন। কিন্তু সমস্যা বাধায় ব্যাটারি রিকশা। ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করার জন্য তিনি এ প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৪-এর (মিরপুর ১০ নম্বর ও আশপাশের এলাকা) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (আনিক) মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনও গোলচত্বর এলাকার সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের সময় আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিগন্যাল বাদ দিয়ে যদি চারদিকে চারটি বাইপাস রোড তৈরি করা যেত, তাহলে গোলচত্বরে এই যানজট থাকত না।
গোলচত্বর এলাকায় এক বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট কামরুল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যাটারি রিকশা। এদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অবস্থার এত অবনতি হতো না। কিন্তু দেখা যায় মাঝেমধ্যে রং সাইড দিয়েও এই ব্যাটারি রিকশা ঢুকে পড়ে।
![]()