

রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটক পার হতেই চোখে পড়ে একেক মুখে একেক রকম আনন্দের রঙ। কেউ হাততালি দিচ্ছে, কেউ বন্ধুকে জড়িয়ে ধরছে, কারো চোখের কোণে আনন্দাশ্রু। হাতে ফলাফলের কাগজ, মুখে পরম তৃপ্তির হাসি। কারণ আজ প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির এ ফল প্রকাশ করেন।
ফলাফল প্রকাশের পরপরই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় শত শত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। ক্যাম্পাসজুড়ে তখন উচ্ছ্বাস, হাসি আর ‘ভালো রেজাল্ট’ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিনন্দনে মুখর পরিবেশ। এক কোণে দেখা যায়, এক মা তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আদর করছেন। আনন্দে চোখে পানি, মুখে গর্বের ছাপ। অন্য পাশে একদল শিক্ষার্থী হাসতে হাসতে দলগত সেলফি তুলছে, কেউবা ফুল দিয়ে বন্ধুকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকেও কলেজ প্রাঙ্গণ ভরে ছিল আনন্দধ্বনিতে। কেউ ফুল দিয়ে শিক্ষককে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, কেউ গান গাইছে, কেউবা চুপচাপ বসে ভাবছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বৃহস্পতিবার সকালে ফলাফল প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করেছে। এ বছর সরকার চেয়েছে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হোক- আমি মনে করি, সেই লক্ষ্য সফল হয়েছে।
গত বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মোট ২ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে পাস করেছিলেন ২ হাজার ৫৩৫ জন। পাসের হার ছিল ৯৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন ১৭৩৭ জন। গতবারের তুলনায় এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার কমেছে। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ধস নেমেছে, এবার পেয়েছেন ৯৮৬ জন।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, এবার প্রশ্নের ধরন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছিল। ফলে কিছু শিক্ষার্থী প্রথমে বিভ্রান্ত হলেও তাদের প্রস্তুতি ছিল ভালো। প্রশ্নের ধরন বুঝতে সামান্য সমস্যা হয়েছে, তবুও তারা ভালো করেছে। এ ফলাফল প্রমাণ করে, আমাদের মেয়েরা মেধাবী এবং ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা দেখেছি, কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসমুখী ছিল না, অনেকে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেনি। এ কারণেও কিছু শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। কিন্তু যারা মনোযোগী ছিল, তারা তাদের যোগ্য ফল পেয়েছে। এটি একদম ন্যায্য মূল্যায়ন।
সংখ্যায় সাফল্য
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ২ হাজার ৫১৪ জন। এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে ২ হাজার ৪৯৫ জন শিক্ষার্থী। পাশ করেছে ২ হাজার ৪৩৪ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী।
অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, আমরা একটি স্কুল-অরিয়েন্টেড কলেজ। অন্য কলেজের মতো ভর্তি পরীক্ষায় মেধা যাচাই করে শিক্ষার্থী নেওয়া হয় না। বরং লটারির মাধ্যমে যাদের ভর্তি করা হয়েছে, তাদেরই আমরা গড়ে তুলেছি। তাই ফলাফলটা আমাদের পরিশ্রমের প্রতিফলন।
এইবার খাতা দেখার ধরন বদলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বছর ধরে দেখা যাচ্ছিল, শুধু লিখলেই পাস, লিখলেই নাম্বার। কিন্তু এবার সেই ধারা পরিবর্তন হয়েছে। খাতা দেখার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রকৃত মেধাবীরা সামনে এসেছে।
অধ্যক্ষের মতে, সামগ্রিকভাবে রেজাল্ট খারাপ বলা যাবে না। এই ফলাফলই প্রমাণ করে, যাদের প্রস্তুতি ছিল, তারা ভালো করেছে। মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।
ক্যাম্পাসজুড়ে আনন্দ ও প্রত্যাশা
ফলাফল জানার পর ক্লাস টুয়েলভের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নওশিন হক জানায়, প্রথমে খুব নার্ভাস লাগছিল। ফল দেখে মনে হচ্ছে, সব পরিশ্রম সার্থক।
মানবিক বিভাগের ছাত্রী রুকাইয়া আফরোজ বলে, প্রশ্ন কিছুটা ভিন্ন ছিল, তবুও আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম। ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে, সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।
অভিভাবক হাসান মনসুর বলেন, মেয়েদের মুখে এই হাসি দেখার জন্যই তো আমরা এত পরিশ্রম করি। কলেজের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
![]()




