[caption id="attachment_9117" align="aligncenter" width="600"]
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে গতকাল মঙ্গলবার একটি পোশাক কারখানা ও সঙ্গে থাকা রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। টিনশেড রাসায়নিক গুদামটির অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল সত্যের পথে[/caption]
‘হঠাৎ তিনতলায় বিদ্যুতের মিটার ব্লাস্ট হয়ে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় সবকিছু। তিনতলায় আমরা ৩০-৩৫ জন ছিলাম। সবাই চিৎকার করছে বাঁচার জন্য। টেবিলের নিচে কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমিসহ কয়েকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বের হয়ে আসি। যেন মৃত্যুর ঘর থেকে ফিরে আসলাম।’
রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে আহত মো. সুরুজ জামান গতকাল মঙ্গলবার এভাবেই আগুনে আটকে পড়া ও বের হয়ে আসার বর্ণনা করেন। সুরুজ বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের সামান্য অংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি ছাড়াও একই ঘটনায় আহত আরও দুজন পোশাক শ্রমিক সোহেল রানা ও আল মামুন বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন গতকাল বিকেলে। সন্ধ্যায় হাসপাতালে তিনজনের সঙ্গে কথা হয় সত্যের পথের। তারা দগ্ধ হননি, ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
সুরুজ জানান, তিনি উত্তরার ট্যাগজোড়া গ্লোবাল বায়িং হাউসে চাকরি করেন। ওই বায়িং হাউসের পোশাক তৈরির কাজ চলছিল আগুন লাগা গার্মেন্টেসের তিনতলায়। সকাল ৯টার দিকে তিনি কাজের তদারকির জন্য সেখানে এসেছিলেন। ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সাড়ে ১১টার পর হঠাৎ বিকট শব্দ শোনেন। এরপরই তিনতলার মিটার বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায় এবং আগুন ধরে যায়। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি।
সুরুজ বলেন, ‘ধোঁয়ার মধ্যে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। টেবিলের নিচে গিয়ে কিছুক্ষণ বসেছিলাম। মনে হচ্ছিল, বেঁচে ফিরতে পারব না। কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসতে পারি। আগুনে ১৬ জন মারা গেছে। আমিও তো মারা যেতে পারতাম; আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।’
পোশাক কারখানাটির চারতলার কাটিং মাস্টার হিসেবে কর্মরত আল মামুন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানালেন, অল্প সময়ের মধ্যেই গার্মেন্টসে তাদের ফ্লোর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় তারা চিৎকার করে জানালা দিয়ে বাঁচার আকুতি জানান। পাশের একটি ভবন থেকে কয়েকজন কারখানা ভবনের চারতলার পেছনের দেয়াল ভেঙে তাদের উদ্ধার করেন।
অগ্নিকাণ্ডের সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে মামুন বলেন, ‘আমরা যে যার মতো কাজ করছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে যেন আগুনের একটা গোলা আসে। ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। আমরা ফ্লোরে শুয়ে পড়ি। পাশের ভবনের লোকজনকে বলি– ভাই, আমাদের বাঁচান। ওরা দেয়াল ভেঙে আমাদের চারজনকে বের করে নিয়ে যায়। আমার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনও হইনি। মনে হচ্ছিল, মারা যাব।’
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, রূপনগরের অগ্নিকাণ্ডে অসুস্থ তিনজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারা শঙ্কামুক্ত।
![]()