

স্তন ক্যান্সার নারীদের জন্য বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে গড়ে প্রতি ১০ নারীর একজন এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। সুস্থতার হার প্রায় শতভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও অনেক নারী লজ্জা বা অজ্ঞতার কারণে প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। এতে রোগ দেরিতে ধরা পড়ে এবং জটিল রূপ নেয়। সময়মতো চিকিৎসাই পারে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফ আসফিয়া রহমান বৈশ্বিক একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, স্তন ক্যান্সার বিশ্বের সব দেশে নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ। প্রতি ১০ নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এতে আক্রান্ত হন। ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে কেবল স্তন ক্যান্সারে মারা গেছেন ছয় লাখ ৭০ হাজার নারী। আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সার শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ। ৪০-৫৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি (৩২ দশমিক ৮ শতাংশ)। তবে তরুণীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকি পুরুষের মধ্যেও আক্রান্তের হার প্রায় ১ শতাংশ।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, দেশে যেসব নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশই তৃতীয় বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ের রোগী। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
চিকিৎসকরা বলেন, প্রাথমিক শনাক্তের মূল কৌশল হলো নিয়মিত স্তন স্ক্রিনিং। নারীদের ৪০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত। তবে পরিবারে স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ৩০ বছর বয়স থেকেই স্ক্রিনিং করা দরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশে ২০২২ সালে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১৩ হাজার নারী। মারা যান ছয় হাজার ৭৮৩ জন। গড়ে প্রতিদিন ৩৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, স্তন ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, বর্তমানে ৩০ বছরের নিচেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই বয়স না দেখে উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
![]()