বাংলাদেশের প্রতিবাদের পর ভারতের একের পর এক অভিযোগ

ত্রিপুরায় পিটিয়ে হত্যার শিকার তিন বাংলাদেশির লাশ দেশে ফিরলে স্বজনরা আহাজারি করেন। কারও সান্ত্বনা কাজে আসেনি পণ্ডিত মিয়ার স্ত্রী রুজিনা বেগমের। বৃহস্পতিবার তোলা-  সত্যের পথে

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে তিন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার তিন গ্রাম। স্বজন হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নিহতদের স্ত্রী ও স্বজনরা। তাদের প্রত্যেকে ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে বিকেলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন বাংলাদেশির মরদেহ গ্রহণ করে বিজিবি তা স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। রাতেই সুরতহাল ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়। নিহতরা হলেন– গাজীপুর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের মৃত আশ্বব উল্লার ছেলে জুয়েল মিয়া (৩০), বাসুল্লা গ্রামের কনা মিয়ার ছেলে পণ্ডিত মিয়া (৪৯) ও কবিলাষপুর গ্রামের কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে সজল মিয়া (২৫)।
সরেজমিন আলীনগর, বাসুল্লা ও কবিলাষপুর গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি করতে দেখা গেছে। গ্রামের লোকজনও শোক প্রকাশ করছেন। নিহতের সন্তানদের কেউ কেউ কান্না করলেও কম বয়সীরা বুঝে উঠতে পারছে না কী করবে। তারা জানে না, তাদের বাবা আর কখনও ফিরবেন না। প্রতিবেশীরা স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজান মিয়া বলেন, তিনজনই দরিদ্র পরিবারের মানুষ। তাদের কেউই চোর ছিলেন না। আর যদি তারা কোনো অপরাধ করেও থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এভাবে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা মানবিক কাজ নয়, এটা নির্মমতা।

গত মঙ্গলবার সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করলে চোর সন্দেহে দেশটির স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের পিটিয়ে হত্যা করে। স্থানীয়রা জানান, সকালে ওই তিনজন একসঙ্গে বিড়ির পাতা সংগ্রহের জন্য পাহাড়ে যান। ভুলবশত সীমান্ত অতিক্রম করে অভ্যন্তরে চলে গেলে স্থানীয়দের হামলা শিকার হন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিহত হওয়ায় অকূল সাগরে পড়েছেন সদস্যরা। গাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, এই তিন পরিবার এখন অসহায় অবস্থায় পড়েছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, তাদের জন্য অনুদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

সরকারের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ
ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে বলা হয়, ত্রিপুরায় একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা (মব) তিন বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে প্রহার ও হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ জঘন্য কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। এটা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন। সরকার এ দুঃখজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ভারত সরকারকে এ ঘটনার বিষয়ে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এ ধরনের অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ভারতকে আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হচ্ছে। দোষীদের শনাক্ত করে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলতে চায়– জাতীয়তা নির্বিশেষে যে কোনো ব্যক্তি অসাবধানবশত সীমান্তের যে কোনো পাশে যেতে পারে; কিন্তু এ অবস্থায় তাঁর মানবাধিকারের পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে।

ভারতের অভিযোগ
নিহতের ঘটনায় ভারত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নিহত তিন বাংলাদেশিকে ‘চোরাচালানকারী’ বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা গরু চুরির চেষ্টা করেছিল।’ তিন বাংলাদেশিকে ‘দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দিয়ে রণধীর বলেন, বাংলাদেশ থেকে তারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত
পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে গরু চুরির চেষ্টা করে। তারা গ্রামবাসীদের ওপর লোহার রড ও ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে এবং একজনকে
হত্যা করে। অন্য গ্রামবাসীরা আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করেন।

Scroll to Top