

সমস্যাগ্রস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক মিলে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চূড়ান্ত রূপ নিতে যাচ্ছে। মূলধন হিসেবে সরকার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ের পরই এসব ব্যাংকের দায়িত্ব বুঝে নেবেন প্রশাসকরা। এরই মধ্যে কোন ব্যাংকে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং তাদের কাজ কী হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রশাসকরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ধাপে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত পাবেন আমানতকারীরা। এই কাজ হবে ১৭ দিনের মধ্যে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি ইউনিয়ন ব্যাংকের। পর্যায়ক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীর ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোর বার্ষিক চাঁদায় গড়ে ওঠা আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিলে বর্তমানে ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো রয়েছে। সেখান থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের দেওয়া হবে। এই তহবিল থেকে এতদিন একটি ব্যাংক বন্ধ হলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও এ তহবিলে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রশাসক হিসেবে কে কোন ব্যাংকে
প্রশাসকরা দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। আর এমডির চুক্তি বাতিল হবে। প্রশাসক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব পাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামীতে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে দায়িত্ব পাচ্ছেন আরেক নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। আর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে আরেক পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেমকে।
প্রশাসকদের প্রথম কাজ হবে পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে সব ধরনের তথ্য সরবরাহ। সেনাকল্যাণ ভবনে এসব ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য স্থাপিত কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সব তথ্য সমন্বয় করবেন।
শেয়ারহোল্ডার ও কর্মীদের কী হবে
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের মূলধনে বড় অঙ্কের ঘাটতির কারণে শেয়ার শূন্য হবে। যদিও ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আর কর্মীদের মধ্যে প্রথম ধাপে এমডিকে পদত্যাগের সুযোগ দেওয়া হবে। বর্তমানে শুধু এসআইবিএল ও ইউনিয়ন ব্যাংকে নিয়মিত এমডি আছেন।
অন্য তিন ব্যাংকে ডিএমডিরা ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে পাঁচ ব্যাংকে এখন ডিএমডি আছেন ১১ জন। তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যাংক থেকে একজন করে ডিএমডি রেখে বাকিদের চুক্তি বাতিল হবে। আর ব্যাংকগুলো থেকে প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে প্রধান ঠিক করা হবে। এসব ক্ষেত্রে একাডেমিক যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও সততা– এই তিন মানদণ্ডের ভিত্তিতে কে থাকবেন, তা ঠিক করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে, তারা বাদ পড়বেন।
জানা গেছে, সাধারণভাবে কোনো কর্মী ছাঁটাই করা হবে না। তবে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়া যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, শুরুতে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতি কর্মীর জন্য একটি মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে।
![]()




