

টানা পাঁচ দিনে ২৪৫ পয়েন্ট হারানোর পর সোমবার ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক বেড়েছিল ২৫ পয়েন্ট। মঙ্গলবার সেই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রেখে প্রথম দেড় ঘণ্টায় সূচকটি আরও ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫২৭৬ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। তবে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে স্বাভাবিক লেনদেন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রমাগত দর হারিয়েছে শেয়ার। এতে ওই অবস্থান থেকে সূচকটি ৮১ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৯২ পয়েন্টে নামে। শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারই মার্জিন ঋণ বিধিমালা পাস হতে পারে–এমন গুঞ্জনে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করেছেন। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, যেভাবে মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে, তাতে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমবে এবং বাজার স্বাভাবিক গতি হারাবে।
গতকালের লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর সকাল ১১টায় ২৭৮ কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে ৪৩টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। তবে দুপুর আড়াইটায় ৮৬ শেয়ারের দর বাড়ার বিপরীতে ২২৮টি দর হারিয়ে কেনাবেচা শেষ হয়। সোমবারের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট হারিয়ে সূচক নামে ৫১৯৭ পয়েন্টে। আর বিক্রির চাপে টাকার অঙ্কে লেনদেন ৭৬ কোটি টাকা বেড়ে ৬০৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বিধিমালা সংশোধনের খসড়ায় মার্জিন ঋণযোগ্য শেয়ার হিসেবে কেবল ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত শেয়ারের মধ্যে যেগুলোর পিই রেশিও সর্বোচ্চ ৩০ এবং ফ্রি-ফ্লোট বাজার মূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা, সেগুলোকেই মার্জিন ঋণযোগ্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী ‘বি’ ক্যাটেগরিভুক্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মার্জিন ঋণ অযোগ্য হবে। আবার ‘এ’ ক্যাটেগরিভুক্ত শেয়ার হওয়ার পরও যেসব শেয়ারের ফ্রি-ফ্লোট বাজার মূলধন ৫০ কোটি টাকার কম বা ৩০ পিই রেশিও, সেগুলোও মার্জিন ঋণ অযোগ্য হবে।
একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, সংশোধিত বিধিমালার ফলে হঠাৎ করেই বিপুল সংখ্যক শেয়ার মার্জিন ঋণের অযোগ্য হবে। পাশাপাশি এসব শেয়ারে যে ঋণ দেওয়া আছে, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করে সমন্বয় করতে হবে। এতে বিক্রির চাপ বাড়ার শঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরুর পর থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এখন মঙ্গলবার এলেই দর পতন হচ্ছে। কারণ ওই দিন কমিশন সভা হয় এবং সবাই ধারণা করে ‘এই মঙ্গলবার’-এ বিধিমালা পাস হবে। অপর এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের সিইও বলেন, দেড় বছর পরও শেয়ারবাজারে সংস্কার বলে তেমন কিছু হলো না। শুধু মার্জিন ঋণ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে বাজার যেভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা আমলে নিয়ে বিএসইসি বাজারকে এমন বার্তাও দিচ্ছে না যে, সংশোধনে বাজার ও বিনিয়োগকারীর কী লাভ হবে। ফলে সবাই ক্ষতির দিকটি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন।
জানা গেছে, নতুন মার্জিন ঋণে যেসব বিধান সংশোধনের ফলে যেসব শেয়ার মার্জিন ঋণ অযোগ্য হবে, সেগুলো সমন্বয়ের জন্য যথেষ্ট ও যৌক্তিক সময় দেওয়ার বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম সমকালকে বলেন, বিএসইসির উদ্দেশ্য বাজারকে অস্থিতিশীল করা নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে এমন নীতি ও বিধান করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা একটি বাস্তবধর্মী ব্যবস্থা পান। তাড়াহুড়ো করে গুরুত্বপূর্ণ বিধিমালাটি সংশোধন করে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টি করতে চায় না বিএসইসি। বরং কিছুটা সময় লাগলেও বাজার ব্যবস্থা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সংশোধনের কাজ চলছে। কমিশন চায়, এই বিধিমালার দুর্বলতার কারণে অতীতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়।
![]()