জ্ঞান ও গবেষণার অগ্রযাত্রায় নতুন দিগন্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


জ্ঞানচর্চার অগ্রযাত্রায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০০৫ সালে যাত্রার পর থেকে ঢাকার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দেশের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে আধুনিকীকরণের চ্যালেঞ্জ এবং শিক্ষার্থীদের আকাক্সক্ষার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান প্রায়শই চোখে পড়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর চোখে স্বপ্ন যেমন ঝলমল করে, তেমনি রয়েছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পর্যাপ্ত হল এবং একাডেমিক পরিবেশ নিয়ে নানা জিজ্ঞাসা। ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা নিয়ে উপাচার্য, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন আমাদের সময়কে। আয়োজনে

সিফাত রাব্বানী ও রাকিবুল ইসলাম

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী জবির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস সুষ্ঠুভাবে চলছে এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে ৩৮টি বিভাগে ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা-গবেষণা ত্বরান্বিত। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয় অনুমোদিত।

ভবিষ্যতে আবাসিক হল নির্মাণ, নতুন কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে স্কিল ডেভেলপমেন্ট, মেন্টরশিপ এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি এবং ক্যাম্পাসকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত হবে অতি দ্রুতই।

বর্তমানে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী জবির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে।

জবিকে বাংলাদেশের শীর্ষ গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

সবার সহযোগিতায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে জবি।

কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, জবি অনুপ্রেরণা ও স্বপ্নসারথির আলোকবর্তিকা

মো. ইবাদুল হক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ৪৩তম বিসিএস

আমার সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন, পেশাগত পরিচয়-প্রাপ্তি, আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনির্বচনীয় স্মৃতিগুলোর কেন্দ্র শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরেই। পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রাচীন শিক্ষালয়টি শুধু ইট-পাথরের অবকাঠামো নয়- তারুণ্যের এক উজ্জ্বল অধ্যায়, এক অমিত সম্ভাবনাময় আলোকিত আশ্রয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হাজার তারুণ্যের স্বপ্ন সূচনার আধার; ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর; আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসের নবদিগন্ত উন্মোচনের অন্যতম সূতিকাগার। তবে মধুর স্মৃতির পাশাপাশি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা আজও প্রকট- পর্যাপ্ত ক্যাম্পাস না থাকা, শ্রেণিকক্ষের সংকট, গবেষণাগারের অভাব ও আবাসন সমস্যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। ঔপনিবেশিক শাসনের মতো বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ করা শিক্ষক-প্রশাসনের অবহেলা-উপেক্ষার শিকার এই বিশ্ববিদ্যালয়। তবু হতাশ না হয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীদের উচিত ঐক্য ও দায়িত্ববোধ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আন্দোলনে যুক্ত হওয়া। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতে হবে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস, আধুনিক গবেষণাগার ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের। পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষার্থীদের বলব- শুধু ডিগ্রি ও চাকরি নয়, নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হোক অদম্য লক্ষ্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বন্ধন অটুট থাকুক, গবেষণায় মন দিতে হবে, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে এগিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। আমরা যারা একসময় এই প্রাঙ্গণের অংশ ছিলাম, বিশ্বাস করি- শত অপূর্ণতা, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ও চাকরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে, একদিন সত্যিকার অর্থেই সব দিক থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত হবে। আর সেই পথচলার নেতৃত্ব নিতে হবে আজকের উদ্যমী, সাহসী, পরিশ্রমী ও মানবিক দায়িত্ববোধের আলোয় উদ্ভাসিত শিক্ষার্থীদের। এ বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়- এটি একটি চেতনা, অনুপ্রেরণা ও স্বপ্নসারথির আলোকবর্তিকা। প্রিয়তমার নীল চোখে তাকিয়ে হাজার সন্ধ্যা কাটানোর এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হৃদয়ে চিরজাগরূক থাকুক- এই প্রত্যাশা।

রাজনৈতিক সহাবস্থানের শুভ্রতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মাহতাবুল ইসলাম প্রান্ত

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার গভীর প্রত্যাশা হলো ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থানের সংস্কৃতি যেন আরও সুদৃঢ় হয়। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি দেশের অন্য যে কোনো ক্যাম্পাসের তুলনায় অনেক বেশি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এখানে নেতৃত্বের মানদণ্ড নির্ধারিত হয় মেধা, মনন ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে, পেশিশক্তির প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নয়।

এই সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে ক্যাম্পাসের সব রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ, সহনশীলতা এবং গঠনমূলক রাজনৈতিক সহাবস্থানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। অতীতের মতো সংঘাত বা পেশিশক্তির প্রদর্শনের পরিবর্তে এখন প্রতিযোগিতা হচ্ছে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে ভালো কাজ করার। প্রতিটি সংগঠনই এখন বুঝতে শিখেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ রক্ষা করাই সবার আগে। আমি আশা করি, এই ইতিবাচক ও প্রগতিশীল ধারা ভবিষ্যতেও অক্ষুণ্ন থাকবে। ক্যাম্পাসের সব পক্ষকে মনে রাখতে হবে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখলেই কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। আমার চাওয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেন ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক সহাবস্থান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশেষ দিনে এটিই হোক আমাদের সবার সম্মিলিত অঙ্গীকার।

অঙ্গীকার হোক গবেষণাকে জীবনঘনিষ্ঠ করা

মালিহা মেহনাজ, শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এলেই পুরো ক্যাম্পাস যেন এক নতুন প্রাণ পায়, আলোচনায় উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রার নানা দিক। এ দিনটি প্রাক্তন থেকে শুরু করে বর্তমান শিক্ষার্থীদের এক অপূর্ব মিলনমেলা। এদিন আমরা যেমন অতীতের গৌরব স্মরণ করি তেমনি খুঁজে পাই ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বিশেষত্ব হলো এর অবস্থান। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে থাকায় এই প্রতিষ্ঠান সরাসরি স্পর্শ করে সমাজের নানা সমস্যাকে। স্থানীয় সমস্যা থেকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ- সবকিছুর সমাধান খুঁজতে হবে এই ক্যাম্পাস থেকেই। স্বপ্ন দেখি এমন এক ক্যাম্পাসের, যেখানে গবেষণার আলোয় উদ্ভাসিত হবে আমাদের শিক্ষার্থীরা, তৈরি হবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব। পাঠ্যবইয়ের গণ্ডি পেরিয়ে নিজস্ব চিন্তা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে তৈরি হবে শিক্ষার নতুন পাঠ। আমাদের অঙ্গীকার হোক, গবেষণাকে জীবনঘনিষ্ঠ করে জ্ঞানের আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। এগিয়ে যাক আমাদের জবি, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিক চারদিকে।

দ্রুত জকসু নির্বাচন বাস্তবায়িত হোক

মো. মাহফুজুর রহমান, শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক জকসু নির্বাচন। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন। তাই এই নির্বাচন হতে হবে প্রশাসনের এবং যে কোনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নির্ভয়ে নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, তাদের ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় এবং ভোটদান সার্থক হয়।

শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে যারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের দায়িত্ব হবে কেবল বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখবে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানে এগিয়ে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণের জন্য আমি চাই খুব দ্রুত জকসু নির্বাচন আলোর মুখ দেখুক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরানো ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে

ইসমাত জাহান ইন্তিয়া, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

ব্রাহ্ম স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। ঢাকার তিনটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি আজ যেন শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ভবনগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, অথচ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত অনিরাপদ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছি। বিশেষ করে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রফিক ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ ও সামাজিক অনুষদ ভবনে প্রতিদিন ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে প্রবেশ করে। এসব ভবনে নেই কোনো পর্যাপ্ত ফায়ার সার্ভিস সিস্টেম, এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে বের হওয়ার সঠিক পথও চিহ্নিত নয়। অন্যদিকে ক্যাম্পাসজুড়ে মশার উপদ্রব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর ডেঙ্গুতে বহু শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়, কেউ কেউ মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধির অভাব শিক্ষার পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরে বাস রাখার কারণে জায়গার এমন সংকট তৈরি হয়েছে যে, হাঁটাচলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনের এই অব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলছে। রাজনৈতিক টানাপড়েন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এখন চলছে কচ্ছপের গতিতে। প্রশ্ন থেকেই যায়, নিরাপদ ক্যাম্পাসের এই স্বপ্ন কি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি একদিন বাস্তবেও রূপ নেবে?

ইতিহাস

১৮৫৮ সালে পুরান ঢাকায় ব্রাহ্ম স্কুল নামে যাত্রা শুরু হলেও ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে এটি পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে এই বিদ্যাপীঠের নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়। ওই সময় এটিই ছিল ঢাকার উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কার্যক্রম বন্ধ করে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক ও জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সাজাতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ গ্রন্থাগারের ৫০ শতাংশ বই দান করা হয়। নারীশিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে জগন্নাথ কলেজে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এই কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় সহশিক্ষা চালু করেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণ করা হলেও পরের বছরে আবার এটি বেসরকারি মর্যাদায় ফিরে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন হলেও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সুদীর্ঘ দেড়শ বছরেরও পুরনো ইতিহাস। বাংলদেশের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুথান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাসে জগন্নাথের অবদান কখনও অস্বীকার করার মতো নয়। পাকিস্তান আমলে সরকারবিরোধী আন্দোলন করায় প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার।

Scroll to Top