[caption id="attachment_11251" align="alignnone" width="600"]
প্রতীকি ছবি[/caption]
মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে গণমাধ্যমে খবরের পরও থামছে না তার অবৈধ কর্মকাণ্ড। অভিযোগ রয়েছে এমপিওভুক্ত ও উচ্চতর স্কেল গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আসছেন তিনি। সম্প্রতি ৩ দিনের প্রশিক্ষণে খাবার, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, ইন্টারনেট বিলের অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের উপর টাকা তসরুপের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, অনৈতিক লেনদেন করতে নিজের ও হিসাব রক্ষকের কক্ষের সিসিক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিবাদ করায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকির মুখে রাখেন তিনি। স্থানীয়দের সাথে সখ্যতার কথা বলে তাদের উপর দমনপীড়ন চালান। আওয়ামী আমলে প্রভাব বিস্তার করা এই কর্মকর্তা এখন স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাপট দেখান। ফলে ভয়ে অনেকেই থাকেন নিরব। তবে সাহস দেখিয়ে অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদও করেছেন কিছু কর্মচারী। সম্প্রতি এর প্রতিকার চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এরপরই এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা এবং প্রশিক্ষণে কোনো অনিয়ম হয়নি মর্মে অফিসের কর্মচারীদের ডেকে জোরপূর্বক মুচলেকা নিয়ে রেখেছেন। এদিকে কর্মচারীদের বদলির ভয় দেখালেও তিনি নিজেই প্রায় সাত বছর ধরে একই কর্মস্থলে রয়েছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ৩ বছর পর পর বদলী হওয়া কথা।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা লিখিত অভিযোগে জানান, নিজ কক্ষের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখে ঘুষ লেনদেন, এমপিওভুক্ত ও উচ্চতর স্কেল গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মচারীদের থেকে ঘুষ নিয়ে আসছেন তিনি। স্থানীয়দের সাথে সখ্যতার কথা বলে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর দমনপীড়ন চালান। গত জুন মাসে শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে ইনহাউজ প্রশিক্ষণে (আই এইচ টি) জেলার ২১শ শিক্ষকের ৩ দিনের প্রশিক্ষণে খাবার, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, ইন্টারনেট বিলের অনিয়োমের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের উপর টাকা তসরুপের অভিযোগ উঠেছে। এসব দুর্নীতি, অনিয়মের কারণে অফিসের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পারফেক্ট ইডুকেশনাল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাখন জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবিরের ব্যবহার অনেক ভালো। কিন্তু গত জুনে ট্রেনিংয়ের সময় খাবারের মান খুবই নিম্নমানের হয়েছিল।
অনিয়মের বিষয়ে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের সবই সত্য। ট্রেনিং শেষে অনেক শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজে ঘুষ লেনদেনের যে ভিডিও এবং প্রশিক্ষণের যে অনিয়ম নিজের চোখে দেখেছি, সেটি প্রমাণ করে তার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সত্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জুন মাসে শিক্ষকদের ৩ দিনের ট্রেনিংয়ের সময় সকালের নাস্তা ১২০ টাকা বরাদ্দ হলেও ৫০ টাকার বেশি খরচ হয়নি। ২৫০ টাকার দুপুরের খাবার সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা, ফোল্ডারের উপকরণের মূল্য সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা খরচ হতে পারে। মূল কথা খাবারের মান একদমই ভালো ছিল না। সব মিলিয়ে এর থেকে তিনি ১০ লক্ষ টাকার উপরে তসরুফ করেছেন। এ বিষয়ে যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে এ জন্য তার উপস্থিতিতে ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর ইলতুতমিশ জাহিদ অফিসের কর্মচারীদের ডেকে মুচলেকা নিয়ে রাখেন। যাতে করে কেউ কোনো প্রকার প্রতিবাদ করতে না পারে। স্থানীয় হওয়ায় তিনি এসব করে পার পেয়ে যান।
লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নজরুল বলেন, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা যাতে ট্রেনিং বিষয়ে কোনো কথা না বলতে পারে সেজন্য জেলা শিক্ষা অফিসার ট্রেনিংয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি মর্মে প্রত্যয়ন নিয়ে আমাদের সেই প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। আমরা লিখিত যে অভিযোগ করেছিলাম তা সঠিক নয় বলে এই প্রত্যয়নে উল্লেখ ছিল।
তিনি আরো বলেন, বদলির ক্ষমতা তার হাতে রয়েছে- এমন ভয়ভীতি দেখানোয় আমরা সাক্ষর করি। তবে অন্য কর্মকর্তারা সাক্ষর করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর ট্রেনিংয়ে যে টাকা তছরুপ করেছে সেখান থেকে প্রত্যেককে কিছু টাকা দেবার জন্য অফার করে। আমরা এই অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বিভিন্ন বিষয়ে ভয়-ভীতি দেখায়।
এদিকে নির্বিঘ্নে অনিয়ম করতে শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবীর এবং হিসাব রক্ষকের (২০৯ নং রুম) কক্ষে সিসি ক্যামেরা নিশ্ক্রিয় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। প্রমাণ হিসেবে অচল ক্যামেরার ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছেন তারা, যা সত্যের পথের কাছে সংরক্ষিত আছে।
পুরনো ভিডিও ভাইরাল
২০২২ সালে অফিসের নিজ কক্ষে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে ঘুষ নেন তিনি। যা সিসিক্যামেরায় রেকর্ড হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আলোচনায় আসেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের নেতাদের ধরে সেই যাত্রায় বিষয়টি ম্যানেজ করেন তিনি। এরপর থেকেই নিজ কক্ষ এবং অফিসের হিসাব রক্ষকের কক্ষের সিসিক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজেও পাল্টে গেছেন। এখন বিএনপি নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়েছেন। এবার আরো সতর্ক হয়ে ঘুষ-দুর্নীতির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাগুরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবির। এসব ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে সত্যের পথকে তিনি বলেন, গত জুন মাসে জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে শিক্ষকদের একটি ট্রেনিং সমাপ্ত হয়েছে। সেটি সুন্দর ভাবে সমাপ্ত হয়েছে। খাবারের মানসহ ফাইল ফোল্ডার থেকে শুরু করে সব কিছুই ভাল হয়েছে এবং রুচি সম্মত ছিল। এ বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা কোনো অভিযোগ করেনি। পাশাপাশি ৩২ জন ট্রেনার সুন্দরভাবে ট্রেনিং সমাপ্ত করতে পারায় শিক্ষা অফিসকে থ্যাংস লেটার দিয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে ট্রেনিংটা আমাদের ভালো হয়েছে। পাশাপাশি গত ৩ বছর আগে আমার অফিসের একজন সহকর্মী একটি মিথ্যা ভিডিও তথ্য যাচাই বাছাই ছাড়াই মিডিয়াতে প্রকাশ করিয়ে আমাকে বিব্রত করেছে। ওই সহকর্মী অন্যত্র বদলী হওয়ার কারণে বাইরে থেকে একের পর এক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
![]()