

ফেরদৌস আরা। প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী। আজ এই বরেণ্য শিল্পীর জন্মদিন। প্রতি বছর এই দিনটি তিনি কাটান ভক্ত-শ্রোতা, সুরসপ্তকের শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসায়। জন্মদিন ও সংগীতের নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী
জন্মদিনে দৈনিক সত্যের পথে-এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। এই দিনটা আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?
ধন্যবাদ। জন্মদিন মানে আমার কাছে কৃতজ্ঞতার দিন। আমি ভাবি, এত বছর গান গাইতে পেরেছি, শ্রোতারা শুনেছেন, ভালোবেসেছেন। এর চেয়ে বড় আশীর্বাদ আর কী হতে পারে!
জন্মদিন এলে কী রকম অনুভূতি হয়?
আমরা চার বোন ও এক ভাই। ছোটবেলায় ভাইয়ের জন্য যথেষ্ট আয়োজন হতো, কিন্তু আমার জন্মদিন ভোলার উপায় কারও ছিল না। আমি ছিলাম সবার ছোট, তাই জন্মদিন মানেই বাসায় বিশেষ খাওয়াদাওয়া, আত্মীয়স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশীদের আসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় শিক্ষার্থীরা আচমকা সারপ্রাইজ দিত; যা আমি ভাবতেও পারতাম না। ২০০০ সালে যখন গানের স্কুল সুরসপ্তক প্রতিষ্ঠা করি, তখন থেকে প্রতি বছর শিক্ষার্থীরাও নানা চমক দেয়। ছেলেমেয়েরাও প্রায়ই ভালোবাসায় ভরা আয়োজন করে ফেলে।
জন্মদিনে নিজের জন্য কী কামনা করছেন?
আমি চাই যতদিন বাঁচি, ততদিন যেন গান গাইতে পারি। সুরের মধ্যে ডুবে থাকতে পারি। কারণ গানের ভেতরে আমি এখনও বেঁচে আছি।
ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কোনো স্মরণীয় জন্মদিনের ঘটনা মনে পড়ে?
একবার আমি কানাডায় ছিলাম। জন্মদিনের আগের রাতে ওরা বলল ‘চলো বাইরে যাই।’ একটু পর দেখি, রাস্তায় স্ট্রিট শিল্পীরা আমার নাম ধরে গান গাইছে! বুঝলাম, ওরা আগেই ব্যবস্থা করে রেখেছিল। তারপর একদল তরুণ-তরুণী রেস্টুরেন্টে ঢুকে আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করল। একজন মা হিসেবে এটি আমার জীবনের অমূল্য মুহূর্ত।
আজ কোনো বিশেষ টেলিভিশন আয়োজন আছে?
হ্যাঁ, প্রতি বছরের জন্মদিনের মতো এবারও আছে। আজ সকালে চ্যানেল আইয়ের ‘গানে গানে সকাল শুরু’ অনুষ্ঠানে আমার স্কুল সুরসপ্তকের শিক্ষার্থীরা সরাসরি গান পরিবেশন করবে। তাদের সঙ্গে থাকবে একজন সেরা কণ্ঠ এবং একজন খুদে গানরাজ বিজয়ী, যারা একসময় আমার কাছেই তালিম নিয়েছিল। দুপুরে তারকাকথনেও সরাসরি অংশ নেব।
আপনার সংগীতযাত্রা শুরু হয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। ফিরে তাকালে কেমন লাগে?
ছোটবেলায় বুঝতাম না, গান শুধু বিনোদন নয়, এ এক সাধনার বিষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি, সংগীতই আমার জীবনের ঠিকানা। প্রতিটি মুহূর্তে গান আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। আজও গানের ভেতরেই শান্তি খুঁজে পাই।
এখনকার সময়ের সংগীতচর্চাকে কীভাবে দেখছেন?
সময় বদলেছে, প্রযুক্তি বদলেছে, তবুও ভালো সুর আর ভালো কণ্ঠের গুরুত্ব আজও অটুট। এখন অনেক তরুণ শাস্ত্রীয় সংগীতে আগ্রহী হচ্ছে, এটি আশাব্যঞ্জক। তবে অনুশীলনের জায়গাটা আরও গভীর হওয়া দরকার। শুধু জনপ্রিয়তার জন্য নয়, গান গাওয়া উচিত অন্তরের তাগিদে।
আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতাও করছেন। নতুন প্রজন্মকে কী বার্তা দিতে চান?
আমি সবসময় বলি, সংগীত শুধু শেখা নয়, এটি বেঁচে থাকার পথ। যে গানকে ভালোবাসে, সে নিজের ভেতর আলোকিত হয়ে ওঠে। সে জন্যই আমি সবাইকে বলি–অনুশীলন, শৃঙ্খলা আর শ্রদ্ধা–এই তিনটি বিষয় মনে রাখলে একদিন সাফল্য আসবেই।
এত বছরের পথচলায় আপনার কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন কী মনে হয়?
মানুষের ভালোবাসা। আমার গান যদি কারও মনকে এক মুহূর্তের জন্য ছুঁয়ে যায়, সেটিই আমার সাফল্য। পুরস্কার আসবে যাবে, কিন্তু শ্রোতার মমতাই শিল্পীর জীবনের আসল প্রাপ্তি।
সংগীতশিল্পী না হলে কী হতেন?
মনে হয় খেলোয়াড় বা নৃত্যশিল্পী হতাম। মা-বাবা চেয়েছিলেন ডাক্তার বানাতে, সেটি হয়নি। তবে আমি বিশ্বাস করি, যে পথেই যেতাম, সফলতা পেতাম। ইডেন কলেজে পড়ার সময় গান, নাচ, খেলাধুলা–সব জায়গাতেই আমি প্রথম হতাম। বড় আপু জান্নাত আরা প্রথম হতেন, আমি রানারআপ। আধুনিক গানে আমি সবসময় প্রথম হয়েছি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এমএ করি। নাচ ও খেলা আস্তে আস্তে দূরে চলে গেলেও গান আমার সঙ্গে রয়ে গেছে চিরকাল।
![]()




