এ. কে. আজাদ: সন্ত্রাসে জনসমর্থন চাপানো যাবে না


চাঁদাবাজি ও পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করার কারণেই পরমানন্দপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দিয়ে কখনও জনসমর্থন ও জনভিত্তিকে দমন করা যায় না। তাই জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে ফরিদপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রোববার বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলার পরমানন্দপুরে গণসংযোগ চলাকালে এ. কে. আজাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় যুবদলের নেতাকর্মীরা এ হামলায় জড়িত ছিলে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

বিএনপির নেতাকর্মীদের এমন হামলা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা বলে মন্তব্য করে এ. কে. আজাদ বলেন, সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করেই ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখনও জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করার কথা জানান তিনি।

এর আগে গতকাল রোববার বিকেল ৪টার দিকে এ. কে. আজাদ ফরিদপুরের রিদপুর সদরের কৃষ্ণ নগর ইউনিয়নের পমানন্দপুর বাজারে যান। প্রথমে তিনি বাজার সংলগ্ন জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বাজার এলাকায় গণসংযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণসংযোগের সময় সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতি নান্নু মোল্লার নেতেৃত্বে একটি মিছিল ঘটনাস্থলে আসে। মিছিলকারীরা এ. কে. আজাদকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যুবদলের মিছিলকারীরা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে এ. কে. আজাদকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা নায়াবা ইউসুফের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, ওই সময় নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী এ. কে. আজাদকে ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ এসে যুবদলের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।যুবদলের মিছিলকারীদের সঙ্গে তখন পুলিশের তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে পুলিশের অনুরোধে এ. কে. আজাদ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ. কে. আজাদের গাড়িবহর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় শেষের গাড়িটি ভাঙচুর করেন যুবদল নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ফরিদপুর সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে যুবদলের কোনো কমিটি নেই। পরমানন্দপুরে আমার কোনো লোক এ ঘটনা ঘটায়নি।’

সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ বলেন, ‘রাজনীতিতে এমন সহিংসতার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকও এমন আচরণ করেননি। নায়াব ইউসুফের কাছ থেকে এমন আচরণ এলাকাবাসী প্রত্যাশা করে না। এটি রাজনৈতিক সংকটকে ঘণিভুত করবে।’ এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এ. কে. আজাদের গণসংযোগে হামলার ঘটনা সম্পর্কে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমি এসবের মধ্যে নেই। আমার নেতা-কর্মীদের বলেছি, এ জাতীয় কোনো কাজ করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ. কে. আজাদ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। তার গাড়িবহরের সঙ্গে আওয়ামী লীগ পদধারী নেতারা থাকেন। তাদের দেখে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।’

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, ‘পরমানন্দপুরে আজ ছিল হাটের দিন। সেখানে এ. কে. আজাদ গণসংযোগ করতে গিয়েছিলেন। অপরদিকে যুবদলের লোকজনও গণসংযোগ করছিলেন। এসময় দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থায় চলে এলে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

দুটি গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি বলেন, ‘এই ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Scroll to Top