

অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জোর দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। বিশেষত বিভিন্ন শপিংমল ও দোকান থেকে ভ্যাট ই-রিটার্নে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাচ্ছে না এনবিআর। অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২ নম্বরের গুলশান ভবন মার্কেটে ৪৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করে। বাকি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করে না। এ মার্কেটে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ইলেকট্রনিকস পণ্যের। এ ছাড়া রেস্টুরেন্ট, স্যানিটারি, মিষ্টি, ওষুধ, এসি, টায়ার, সেলুন, ক্যামেরা বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গত ২ জুলাই অধিদপ্তরের অনুসন্ধানকারী দল গুলশান-২ নম্বরে গুলশান মার্কেটে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (উত্তর) অধীন মার্কেট। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ওই মার্কেটে মোট ৪৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চালু অবস্থায় রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত ও আটটি অনিবন্ধিত। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও অনলাইনের আওতায় আসেনি। এনবিআরে জমা দেওয়া তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মার্কেটে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূসকের আওতায় এনে প্রকৃত করদায় নিরূপণ এবং যথাযথ ভ্যাট আহরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান সমকালকে বলেন, করদাতারা পণ্যের মূল্যের সঙ্গে ঠিকই ভ্যাট পরিশোধ করছেন। কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী সরকারের পক্ষ থেকে এ ভ্যাট সংগ্রহ করেছেন, তাদের অনেকেই সরকারি কোষাগারে তা জমা দিচ্ছেন না। ব্যবসায়ী সমাজকে এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। এ বিষয়ে সমন্বিত ও কঠোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলশান ভবনের এ মার্কেটের দোকানগুলোতে প্রচুর বেচাকেনা হয়। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। নিবন্ধন নিলেও নিয়মিত রিটার্ন ও ভ্যাট দেয় না কেউ কেউ। অথচ ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করছে। এতে করে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এনবিআর দেশব্যাপী নিবন্ধনের বাইরে থাকা মার্কেটের দোকান ও শোরুমকে দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আনার ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষত এনবিআর অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে।
অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাট আদায়ে এনবিআর যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারেনি। ইএফডি বা ইসিআর মেশিন বসানোসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তেমন সাফল্য নেই। শপিংমল ও চেইনশপ ছাড়া ক্রেতারা ছোট ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দেয় না। এরপরও তাদের কাছ থেকে একেকবার একেক ধরনের নিয়ম করে ভ্যাট নিচ্ছে এনবিআর। ছোট ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই স্বল্পশিক্ষিত। ই-রিটার্ন সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের মূসক সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়, শপিংমলের সব প্রতিষ্ঠানকে মূসক বা ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন গ্রহণ না করার ফলে পণ্যের মূল্যের সঙ্গে মূসক অন্তর্ভুক্ত থাকায় আদায় করা মূসকসহ মূল্য থেকে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব কোষাগারে জমা হচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধনের আওতায় আসেনি– সারাদেশে এমন বহু ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ করে হোটেল, শপিংমল ও সুপারশপ। নানা কৌশলে বহু প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন আওতার বাইরে রয়েছে। ফলে সরকার সঠিকভাবে ভ্যাট পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, সারাদেশে এক কোটির মতো দোকান আছে। মাত্র পাঁচ লাখ বা তার কিছু বেশি দোকানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে পেরেছে এনবিআর। তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন, একটি করে খাত চিহ্নিত করে ভ্যাটের আওতায় আনা হোক। কিন্তু এনবিআর একেকবার একেক ধরনের নিয়ম করে ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফেলে দেয়। তাতে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট থেকে মুখ ফেরানোর চেষ্টা করেন। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই স্বল্প বা অশিক্ষিত। ই-রিটার্ন বুঝে তা অনলাইনে দাখিল করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। ফলে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম।
![]()