

বাংলাদেশের রাজনীতি একটি নতুন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়ন আওয়ামী লীগকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। শুধু শেখ হাসিনা নয়, সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রধান সারির সব নেতাই হয় দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন অথবা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন।
বিশ্বের নানা দেশেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রায় সব প্রথম সারির নেতা এবং সরকারের নিয়োগ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের একসঙ্গে এমন পতন বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। এ ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে সাবেক ক্ষমতাসীন দল কী পর্যায়ের এবং কী বিস্তৃতি নিয়ে দলীয়করণ করেছিল এবং কীভাবে সরাসরি সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয় আনুগত্যবাহী হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
পরবর্তী সময়ের বাস্তবতায় বাংলাদেশ যেমন নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, মব-সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে, তেমনি নতুন কিছু সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিতা, বিদ্যায়তনিক, সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজে নতুন ধরনের বিন্যাস লক্ষ করা যাচ্ছে। পুরোনো আওয়ামী লীগনির্ভর ব্যবস্থা ভেঙে নতুন করে ইতিহাস পর্যালোচনা ও সমাজ বিশ্লেষণের প্রবণতাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য তৈরির যে চেষ্টা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা নিশ্চয়ই ইতিবাচক।
অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু দলের বারবার বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। জুলাই সনদে স্বাক্ষর না দিতে চাওয়ার ফলে সে বিভেদ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব অনৈক্যকে বিবেচনায় রেখেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ ও মতের পার্থক্যকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও সহিংসতার ইতিহাস। এ দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার একটি বড় কারণ নির্বাচনের পদ্ধতি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তীব্র দ্বিমত ও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা। আওয়ামী লীগের শাসন পতনের পরে যে রাজনৈতিক দলগুলো এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে, তারা সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছে যে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাই পরবর্তী বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে।
একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ, উচ্চকক্ষ প্রবর্তনসহ বিচার বিভাগ, পুলিশ, মিডিয়া, নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কারসহ মোটাদাগে একটি বড় সংখ্যার সংস্কার প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।
![]()




